অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন – অত্যাধিক ফাস্ট ফুড বা অতিরিক্ত তেল-মশলা দেওয়া খাবার খাওয়া এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যপারে নিত্যদিন অনিয়ম করার কারণে বেশীরভাগ লোক স্থূল হয়ে পড়ে। ওজন বৃদ্ধি এমন একটি সমস্যা যা অনেক বিপজ্জনক এবং গুরুতর রোগকে আমন্ত্রণ জানায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বেশিরভাগ মানুষ আজ এই সমস্যাযর সাথে লড়াই করছেন। তবে আপনি কি জানেন যে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আপনাকে এই গুরুতর সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

আজকে আমরা গ্রিন কফি সম্পর্কে কথা বলব। ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি সম্পর্কে অনেকেই শুনে থাকতে পারেন, তবে গ্রিন কফি থেকে ওজন কমাবেন কীভাবে? সুস্থ  থাকতে গ্রিন কফি কীভাবে সাহায্য করে সেই সম্পর্কেই কথা বলব স্টাইলক্রেসের এই নিবন্ধে।

ভূমিকা | Green Coffee for weight loss

গ্রিন কফি খুব সহজে এবং অত্যন্ত কম সময়ে বানানো যায়। এক কাপ গরম জলে এক চা চামচ সবুজ কফি পাউডার মেশালেই তৈরী হয়ে যাবে সবুজ কফি। বাজারে তিন ধরণের সবুজ কফি পাওয়া যায় – গুঁড়ো কফি পাউডার, ফ্রিজ-ড্রায়েড কফি এবং দানাদার কফি পাউডার। ফ্রিজ-ড্রায়েড গ্রিন কফি হল সেরা মানের দ্রবনীয় কফি পাউডার। অন্যদিকে, দানাদার কফি পাউডারে বেশি পরিমাণে ক্যাফিন আছে এবং নিমেষের মধ্যে কফি বানানোও যায় সবুর কফির দানাগুলি দিয়ে।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, এই সবুজ কফি কিভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে? কখন এই কফি খেলে বেশী উপকার পাবেন? তবে, তার আগে জেনে নিন, সবুজ কফির দানার মধ্যে আর কী কী উপকারিতা লুকিয়ে রয়েছে –

ওজন কমাতে গ্রিন কফি কেন উপকারী

ওজন কমাতে সাহায্য করে এরকম সাপ্লিমেন্ট খাবারের মধ্যে গ্রিন কফির নাম অনেকেই শুনেছেন। তবে, ওজন হ্রাস করতে গ্রিন কফি কীভাবে সহায়তা করে এটি বুঝতে, আমাদের নির্দিষ্ট উপাদানগুলি এবং তাদের কার্যকারিতা বুঝতে হবে। এটি জানার আগে আমাদের বুঝতে হবে কেন গ্রিন কফি সাধারণ কফির পরিবর্তে ওজন হ্রাসে সহায়ক হিসাবে বিবেচিত হয়।

প্রকৃতপক্ষে, আমরা সাধারণভাবে যে কফি ব্যবহার করি তা প্রক্রিয়াজাত হয়। এই কারণে, এর স্বাদটি বেশ আকর্ষণীয়, তবে এতে আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলির অভাব রয়েছে। অন্যদিকে, গ্রিন কফি কোনওভাবেই প্রক্রিয়াজাত করা হয় না, স্বাভাবিক কফির একটি প্রাকৃতিক রূপ যা সরাসরি ব্যবহৃত হয়। তাই, ওজন হ্রাস জন্য গ্রিন কফি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গ্রিন কফি খাবার আরোও অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন –

১. ইনসুলিন সক্রিয় করে | green coffee for weight loss

প্রকৃতপক্ষে, এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড (Chlorogenic Acids) রয়েছে, (1) যার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ইনসুলিন হরমোনকে সক্রিয় করে এবং হৃদয়ের বিভিন্ন রকমের সমস্যা প্রতিরোধ করে। একই সময়ে, এতে ক্যাফিনের পরিমাণ সাধারণ কফির চেয়ে অনেক কম পরিমাণে থাকে। এই কারণে গ্রিন কফি খেলে ক্যাফিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি দেহের বেশী ক্ষতি করতে পারে না। এই কারণেই এটি ওজন হ্রাসের জন্য ভাল ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে গ্রিন কফি স্থূলতার জন্য দায়ী জিনকে হ্রাস করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারীতা (2) বৃদ্ধি করে।

২. চর্বি শোষণ প্রতিরোধ করে

অন্য একটি গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে গ্রিন কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড চর্বি শোষণকেও বাধা দিতে পারে। গ্রিন কফি দেহের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে শরীরের মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে।একই সাথে এটি লিভারের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যা দেহে ফ্যাট জমতে বাঁধা দেয়।(3) আমরা জানি, দেহের ইতি-উতি চর্বি জমে যাওয়াই স্থূলত্বের সমস্যার মূল লক্ষণ।

৩. রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে

গ্রিন কফিতে আরও একটি বিশেষ উপাদান পাওয়া যায় – ট্রাইগোনেলিন (Trigonelline)। (4) বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং ট্রাইগোনেলিন, এই দুটি উপাদান সম্মিলিতভাবে ইনসুলিন হরমোনকে সক্রিয় করে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারীতা সঠিক মাত্রায় বজায় থাকলে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলেও চিন্তার কোনো বিষয় নেই। (5)

৪. স্থূলত্ব সম্পর্কিত হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে

শুধু এটিই নয়, গ্রিন কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে স্থূলত্ব আনতে পারে বা ওজন বৃদ্ধি করে এমন হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। (6) ফলে, মাঝেমধ্যে হাই-ফ্যাট খাবার খেলেও বিশেষ কোনো সমস্যা হয় না।

৫. ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড শরীরের প্লাজমা ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরণের ফ্যাট) এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে, যা স্থূলত্ব সমস্যার অন্যতম এক কারণ। (7)

 Click for buy

গ্রিন কফি থেকে ওজন হ্রাস সম্পর্কিত সুবিধাগুলি জানার পরে, এখন আমরা ওজন হ্রাসের জন্য গ্রিন কফির ব্যবহার সম্পর্কে কথা বলব।

স্থূলতা কমাতে গ্রিন কফি কীভাবে ব্যবহার করবেন?

ওজন কমাতে গ্রিন কফি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা আপনাকে কার্যকর কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানাচ্ছি।

১. গ্রিন কফি | Green Coffee for weight loss

উপাদান

ব্যবহারের পদ্ধতি

২. পুদিনা পাতা দিয়ে গ্রিন কফি

green coffee for weight loss

গ্রিন কফির একই স্বাদ যদি আপনার পছন্দ না হয়ে থাকে তবে স্বাদ পরিবর্তন করতে কফির মধ্যে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

উপাদান

ব্যবহারের পদ্ধতি

কেন উপকারী?

গ্রিন কফির ব্যবহার ওজন কমাতে সহায়ক। এতে পুদিনা পাতা মেশালে এর প্রভাব আরও বেড়ে যায়।

৩. দারুচিনি দিয়ে গ্রিন কফি

green coffee for weight loss

উপাদান

ব্যবহারের পদ্ধতি

কেন উপকারী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, দারুচিনি নিজেই স্থূলত্ব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়। এটি বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং রক্তে শর্করাড় মাত্রাকে হ্রাস করে। এই কারণে গ্রিন কফির সাথে দারুচিনির ব্যবহার ওজন হ্রাসকে ত্বরান্বিত করতে পারে (8)

৪. আদা দিয়ে গ্রিন কফি

green coffee benefits

উপাদান | green coffee for weight loss

ব্যবহারের পদ্ধতি

কেন উপকারী?

দারুচিনির মতোই, আদাতেও রক্তে শর্কার পরিমাণ হ্রাস করার, বিপাক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার এবং স্থূলত্বের সমস্যা সরাসরি নির্মূল করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে।(9) এই কারণে গ্রিন কফির সাথে আদার ব্যবহার করলে আরোও ভাল ফল পাওয়া যায়।

৫. হলুদ দিয়ে গ্রিন কফি

উপাদান

ব্যবহারের পদ্ধতি

কেন উপকারী?

হলুদ নিজেই বিভিন্ন ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যে নিয়মিত হলুদ খেলে স্থূলত্বের সমস্যা দূর হতে পারে। (10) এ জাতীয় পরিস্থিতিতে, এটা বলা ভুল হবে না যে গ্রিন কফির সাথে হলুদ মেশালে তা ওজন হ্রাস প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত কার্যকর করতে তুলবে।

গ্রিন কফি খাবার সঠিক সময় | green coffee for weight loss

গ্রিন কফি ওজন হ্রাসে সহায়তা করে নিসন্দেহে। তবে, সঠিক সময়ে খেলে এর কার্যকারীতা আরোও বেড়ে যায় এবং মনোমত ফল পাওয়া যেতে পারে। জেনে নিন, কোন কোন সময় গ্রিন কফি খাবার উপযুক্ত সময় –

উপসংহারে বলা যায়, ওজন হ্রাস করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। আপনি যদি ওজন হ্রাস করতে চান তবে আপনার নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা করা উচিত। তবে আপনার চিকিৎসক যদি ওজন কমাতে সহায়ক এমন সাপ্লিমেন্ট ফুড খাবার পরামর্শ দেয় তবে আপনি গ্রিন কফি এক্সট্র্যাক্টের মতো ওজন হ্রাসের পরিপূরকগুলি ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য কেবল গ্রিন কফি এক্সট্র্যাক্ট ব্যবহার করলে তা আপনাকে মনোমত ফল দেবে না। তবে, আপনি গ্রিন কফি খাওয়া শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।

গ্রিন কফি থেকে ওজন হ্রাস ছাড়াও কী কী অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে আপনাকে নিবন্ধে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আশা করি এই নিবন্ধটি আপনাকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে। তা ছাড়া এই বিষয়ে আপনার যদি কোনও প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকে তবে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সটি ব্যবহার করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *